শিক্ষনীয় ছোট গল্পঃ জীবনের দুটি প্রান্ত
প্রিয় পাঠক এবং পাঠিকারা শিক্ষামূলক ব্লগ বিডি নিয়ে এলো আপনাদের জন্য শিক্ষনীয় ছোট গল্প "জীবনের দুটি প্রান্ত" । গল্পটি লিখেছেন মোঃ ইমন আহমেদ ।
লেখক পরিচিতিঃ
নামঃ মোঃ ইমন আহমেদ
গ্রাম :সুনামপুর(অতির বাড়ি)
ডাকঘর :লালাবাজার
উপজেলা :দক্ষিণ সুরমা
জেলা : সিলেট
জন্মস্থানঃ সিলেট
পেশাঃ ছাত্র
জীবনের দুটি প্রান্ত
ফারদিন ১৯ বছরের এক টগবগে যুবক। মিসেস মারিয়াম ও মিস্টার ওবায়েদ সাহেবের একমাত্র ছেলে। সে সদ্য কলেজে ওঠেছে। মা-বাবার একমাত্র সন্তান হওয়ায় কোনো কিছুর কমতি ছিল না। যা আবদার করত তাই সে পেত,বাবা না করতেন না যেহেতু তিনি ছিলেন একজন চাকরিজীবী।আর মায়ের কাছে তো কোনো কিছুর আবদার করতে হত না,এমনিতেই সব কিছু পেত। এভাবে চলছে তাদের সুখের সংসার। এরই মধ্যে হঠাৎ একদিন দেশে অনুপ্রবেশ ঘটে করোনা ভাইরাসের,শুরু হয় লকডাউন। চারদিকে স্থবিরতা! ওবায়েদ সাহেবের চাকরিটাও চলে যায় এক মাসের মাথায়। যেহেতু তিনি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করছিলেন, সেহেতু কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় কোম্পানি কোনো কিছু করা ছিল না। ঘরবন্দি অবস্থায় তাদের দিনগুলো কাটছিল। এরমধ্যে একদিন ওবায়েদ সাহেবের জ্বর ওঠে। সময়ের সাথে তা আরো তীব্র হতে থাকে। এবং একসময় তার শ্বাসকষ্ট ও শুরু হয়। উপায় না দেখে ফারদিন ও তার মা ওবায়েদ সাহেবকে হাসপাতলে নিয়ে যায়। ওবায়েদ সাহেবের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। তিন দিনের মাথায় তার অবস্থার আরো অবনতি হয়। তাকে ডাক্তাররা আইসিউতে নিয়ে যায়। এভাবে চলতে থাকে প্রায় দুই সপ্তাহ। দেখতে দেখতে তার বাবার জমানো সব সঞ্চয় শেষ হয়ে যায় চিকিৎসায়। শুরু হয় আর্থিক শংকট। আত্মীয় স্বজনরা তাদের সাধ্যমত যা পারে সহযোগিতা করে। ধীরে ধীরে ঘর থেকে সব শখের জিনিসগুলো হারিয়ে যেতে শুরু করে। মিসেস মারিয়াম এর কেনা সোফা,ওবায়েদ সাহেবের খেলা দেখার টিভি,ফারদিনের প্রিয় গেমিং পিসি, গিয়ার সাইকেল, ক্যামেরা আরো কত কি। আইসিউতে ২১ দিন রাখার পর বের করা হয় ওবায়েদ সাহেবকে।ভালোই চলছিল। দুইদিন পর তার আবার শরীর খারাপ হয়। প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট ও কাশির সাথে রক্ত ও আসছে। যতক্ষণ পর্যন্ত ডাক্তার বুঝতে পারে তার ফুসফুসে ইনফেকশন হয়েছে ততক্ষণে ওবায়েদ সাহেব শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ফারদিনের কোলে। ফারদিন পাথরের মতো তার বাবার পাশে বসে আছে, তার চোখ দিয়ে পানির স্রোত বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার মুখে কোনো শব্দ নেই। আর মিসেস মারিয়াম তো চিৎকার কাঁদছেন।ফারদিন ও বুঝতে পারে না কি করবে। বাবার লাশ নিয়ে যায় গ্রামের পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করার জন্য। প্রশাসনের বাঁধা পরে তাকে দাফন করতে হয় সরকারি কবরস্থানে। বাবা চলে যাওয়ার কারণে পরিবারের ব্যয়ভার এসে যায় ফারদিন ও মিসেস মারিয়ামের ওপর। তারা অন্যের সাহায্যের দিকে না তাকিয়ে আত্মসম্মানের সাথে কাজ শুরু করেন। মিসেস মারিয়াম কাজ করেন একটি বুটিক শপে ও ফারদিন লেগে যায় “ওয়েল ফুড ” এ ওয়েটার এর কাজে। ফারদিন তার জীবনের বড় ধাক্কা সামলিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা দেয় এবং অত্যন্ত ভালো রেজাল্ট করে। মুদ্রার ন্যায় জীবনে দুটি পিঠ দেখার পরে ও ফারাদিন নিজের অস্তিত্বকে ধরে রেখেছে । এটাই তো এখনকার যুবকদের মধ্যে প্রয়োজন। যাই হোক ফারদিন এর এই জীবন চরিত্র থেকে সবার শেখার আছে অনেক কিছু, তা নয় কি?
শেষ কথাঃ শিক্ষনীয় ছোট গল্প- জীবনের দুটি প্রান্ত ।
শিক্ষামূলক ব্লগ বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url